আবহাওয়া, রূপ ও বৈচিত্রে আমাদের বাংলাদেশ

আবহাওয়া, রূপ ও বৈচিত্রে আমাদের বাংলাদেশ

বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ার পালাবদলে ঘুরেফিরে আসে আমাদের ষড় ঋতু শীত, গরম বৃষ্টির খেলা চলে সারা বছর ফুলে, ফলে, শস্য, সৌন্দর্যে বৈচিত্র্যপূর্ণ, আমাদের প্রতিটি গ্রাম দুই মাস পর পর আমাদের ঋতুর পরিবর্তন হয়ে, প্রকৃতির রঙের পরিবর্তন করে দেয় গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত বসন্ত, এই ছয় ঋতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের মাঝে আবির্ভূত হয় ফলে আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আনে ব্যাপক পরিবর্তন তাই ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে রঙের পরিবর্তন দেখা যায়

প্রতিটি ঋতুর আগমনই আমাদের প্রকৃতি মনমুগ্ধকর সাজে সজ্জিত হয় গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপ, বাংলা নববর্ষ দিয়েই তার সূচনা, জ্যৈষ্ঠের শেষ পর্যন্ত তা চলতে থাকে মাঝেমধ্যে কালবৈশাখীর প্রচন্ড ঝড়, আমাদের প্রকৃতির সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যায় আষাঢ় মাসের প্রথম দিবস হতে, শ্রাবণের শেষ অবধি বর্ষা এই ঋতুর উন্মাদনায় অবিরাম বারিধারায় কৃষকের মুখে যেমন হাসি ফোটায়, তেমনি বন্যার ক্ষতি আমাদের মনে অনেক পীড়া দেয় আশ্বিনের অন্তিমকাল পর্যন্ত শরতের শুভ্র হাসিতে মাঠ ঘাট পথ-প্রান্তর ভরে ওঠে আকাশ মাঠ সবই সাদায় সাদায় ভরে যায় কার্তিক অগ্রহায়ণ, হেমন্ত ঋতুতে নতুন ফসলের আবির্ভাব, যেন কৃষকের মনে সাড়া দেয় কৃষকের বাড়িতে ফসলের মৌ মৌ গন্ধে মন ভরে যায় সেই সময় চলে নবান্ন উৎসব এরপরেই কুয়াশা নিয়ে হাজির হয় শীতকাল শীতের অবসান ঘটিয়ে চলে আসে ঋতুরাজ বসন্ত এভাবেই চলতে থাকে আমাদের প্রকৃতির পালাবদল ।  আমরা প্রতিটি ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চেষ্টা করি

গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-ডোবা, সবই শুকিয়ে যায় মানুষ, পশু-পাখি, গাছ-পালা, সবই প্রচন্ড তাপ এর কাছে হার মানে তখন প্রচন্ড পথ পরিক্রমায় দু-একজন পথিক নজরে পড়ে এই ঋতুটা কারো কারো কাছে প্রচন্ড অসহ্য হলেও, গাছে গাছে আম, কাঁঠাল লিচু সহ নানা ধরনের সুমিষ্ট ফল দেখতে পাওয়া যায় সুস্বাধু ফলের রসে ভরে যায়, আমাদের মন এসময়ে কালবৈশাখীর কবলে পড়ে অনেকে হারায় তাদের বাড়ি-ঘর বিভিন্ন গাছপালা কালবৈশাখীর ঝড়ে আম কুড়ানোর ধুম পড়ে যায়

বর্ষাকাল: গ্রীষ্মের অসহ্য গরম আর ধূলিময় পথঘাট মাঠ-প্রান্তরকে সিক্ত করার জন্য আসে বর্ষাকাল সময় আকাশে কালো মেঘের ভেতর থেকে বজ্রপাতের গর্জন শোনা যায় রাশি রাশি কালো মেঘ, দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটে বেড়ায় আর অবিরাম বর্ষণে খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা-পুকুর, মাঠ-ঘাট, পানিতে কানায় কানায় ভরে যায় এসময়ে প্রকৃতির মাঝে কেয়া, কামিনী, হিজল কদম ফুল ফোটে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয় জলরাশি আর মাঝখানে থাকা গ্রামকে দ্বীপ মনে হয় আবার কখনো কখনো অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা দেখা দেয়


শরৎকাল: বর্ষার পরেই আছে শরৎকাল বসন্ত ঋতুকে যেমন ঋতুরাজ বলা হয়, তেমনি শরৎকালকে ঋতুরানী বলা হয়ে থাকে সময়ে গাছে শেফালী ফুল ফোটে শিশির ধোয়া প্রভাতে, শেফালির সুবাসে আকাশ বাতাস পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে খোলা আকাশে সাদা তুলোর মতো খন্ড খন্ড সাদা মেঘ দেখা যায়   মনে হয়, একখণ্ড তুলা আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে   এসময় প্রকৃতিতে কাঁশ ফুল ফোটে নদী-নালায় কাঁশবন দেখা যায় রাতে চাঁদের আলোতে কাঁশ বনও অপরূপ সৌন্দর্য মন্ডিত হয় যার সৌন্দর্য দেখলে মানুষের মন আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে

হেমন্তকাল: হেমন্তের আবির্ভাবে প্রকৃতি নতুন ধানের গন্ধে ভরে যায় কার্তিক অগ্রহায়ণ, এই দুই মাস হেমন্তকাল এই সময়ে ধানের ক্ষেত সোনালি রঙ ধারণ করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, সোনালী ফসল ঘরে তোলার আনন্দে কৃষাণ-কৃষাণীর মন ভরে ওঠে ঘরে ঘরে চলে নবান্ন উৎসব হেমন্তের অবসান হতে না হতেই শীতল বাতাসে, শীতের আগমনী বার্তা বোঝা যায়


শীতকাল: শীতের আগমনে প্রকৃতি যেন শুস্ক বিবর্ণ, সৌন্দর্য বিহীন রূপ ধারণ করে বৃক্ষরাজি প্রায় পাতাবিহীন হয়ে পড়ে উত্তরের বাতাস বইতে শুরু করে শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে এই সময়ে ভাপাপিঠা, খেজুরের রস, নতুন নতুন শাকসবজি ইত্যাদিতে একরকম মানুষের মনে আনন্দ বাড়িয়ে দেয় তেমনি উত্তরাঞ্চলে চলে না খেয়ে থাকা এবং প্রায় শীত বস্ত্রবিহীন অবস্থায় শীতের বিরুদ্ধে চলে অবিরাম লড়াই

বসন্তকাল: একদিকে শীতের শেষ, অন্যদিকে ঋতুরাজের আগমনে বসন্তের আবির্ভাব গাছে গাছে নতুন পাতা গজায় যা শীতের সৌন্দর্য হীনতা দুর করে, প্রকৃতিতে করে তোলে সৌন্দর্যমণ্ডিত সময়ে প্রকৃতিতে নানা রঙের ফুল ফোটে । পলাশ, অশোক, শিমুল সহ ফুলে ফুলে প্রকৃতি রাঙ্গিয়ে তুলে আম-কাঁঠাল লিচু ফুলের গন্ধে করে গাছে গাছে

এভাবেই ঘুরে ফিরে আসে ষড়ঋতু আমাদের দেশকে ষড়ঋতুর বাংলাদেশ বলা হয়   আমাদের দেশে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা টিকে থাকি কবির ভাষায় আমরা বলতে পারি, আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়, হয়তো মানুষ নয় শঙ্খচিল বেসে


Post a Comment

0 Comments

Close Menu